
রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা কলি ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন নিশ্চিত হওয়ার পর পুরোপুরি নির্বাচনমুখি হয়ে পড়েছে তরুণদের নেতৃত্বে গড়া দলটি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে যাচাই-বাছাই চালাচ্ছে দলটি। ইতোমধ্যে ১৫০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এসব আসনের কয়েকটিতে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য খোলা হচ্ছে বিশেষ “ক্রাউডফান্ডিং” তহবিল। যেখানে দেশ-বিদেশের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করা হবে। অবশ্য এতে নির্বাচন কমিশনের বিধিমালার বিষয়টিও মাথায় রাখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি কোনও দলের সঙ্গে জোট করবে কিনা, সেটি নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে জোটে যাওয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি।
জোটগত ও একক যেভাবেই হোক; নির্বাচনে এনসিপি চমক দেখাবে বলে মনে করছেন দলের একাধিক নেতা। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বড় কোনও জোটে না গেলে নির্বাচনে তাদের ভালো করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এ ব্যাপারে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “নিবন্ধন ও প্রতীক জটিলতায় এতদিন নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করা যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি ছিল। কৌশলগত কারণে এ নিয়ে জোরালো কোনও বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা নিবন্ধন ও শাপলা কলি প্রতীক পেয়েছি। গঠন হয়েছে ১০ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আজ থেকেই নির্বাচনি ট্রেনে উঠলাম। আশা করি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবার তারুণ্যের জয় হবে।“ ইতোমধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। প্রার্থীদের বায়োডাটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
কমপক্ষে ১৫০টি আসনে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব। তিনি বলেন, “এ সপ্তাহেই এসব আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে৷ ধাপে ধাপে বাকি আসনের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও জানান, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে অবস্থান, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা, রাজনৈতিক বোঝাপড়া, দুর্নীতি ও অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত না থাকা এবং দীর্ঘমেয়াদে দলের প্রতি কমিটমেন্টধারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে দলের ১০ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়। কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন, দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আর সেক্রেটারি করা হয়েছে দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাকে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আরিফুল ইসলাম আদীব, মাহবুব আলম মাহির, খালেদ সাইফুল্লাহ, এহতেশাম হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা, অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর, সাইফুল্লাহ হায়দার ও অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম।
এনসিপির দেড়শ' জনের প্রার্থী তালিকা বাছাই সম্পন্ন হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে এরই মধ্যে দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে শীর্ষ কয়েকজনের আসন ও প্রার্থিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। নেতাকর্মীরাও সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে তাদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক প্রচার করছেন।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানান, ঢাকা-১১ (রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী) আসনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ (পীরগাছা, কাউনিয়া) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত (ঢাকা-১৮), যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া), দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার), উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১ (সদর, তেতুলিয়া ও আটোয়ারী), সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৪ (ঢাকা উত্তর সিটি ও সাভার উপজেলার একাংশ), যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ (সদরের একাংশ ও পলাশ), সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ (খিলগাঁও-সবুজবাগ), যুগ্ম সদস্য সচিব সাইফ মোস্তাফিজ সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) এবং জয়নাল আবেদীন শিশির কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, লালমাই) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
তুষার জানান, প্রাথমিক তালিকা এই কয়েকজনের নাম মোটামুটি নিশ্চিত। বাকিগুলোতেও শিগগিরই ঘোষণা আসবে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনি আসনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি। গত ৪ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এমনটি জানান দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন একটি সৌন্দর্য খালেদা জিয়া প্রার্থী হচ্ছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তার আপসহীন ও লড়াকু নেতৃত্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অনেক শক্তিশালী করেছে। তাই আমরা তার সম্মানার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রথমবারের মতো ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে এনসিপি। তাই অনেক হিসাব-নিকাশ করে তাদের পা ফেলতে হচ্ছে। কারণ, শুরুতেই ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষে নয় দলটি। তাই দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে নিজেদের সত্তা বিসর্জন না দিয়ে এককভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। অচিরেই প্রকাশ হবে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। তবে তাদের সঙ্গে বড় দুই দল বিএনপি বা জামায়াতও ভেতরে ভেতরে আলোচনা করছে।
তিনি বলেন, “এ নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ চিন্তা করতে হচ্ছে। তবে জোটের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। এটি খোলাসা হতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।”
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জাতীয় নির্বাচনে তাদের খরচের জোগান আসবে নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেওয়া অনুদানে। এজন্য একটি বিশেষ তহবিল ক্রাউড ফান্ডিং গঠনের কাজ চলছে। দেশ-বিদেশে ব্যাপক হারে এ নিয়ে ক্যাম্পেইন করা হবে।
এ বিষয়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “একটি উদীয়মান দল হিসেবে নির্বাচনি ব্যয় আমাদের জন্য এককভাবে সম্ভব নয়। তাই আমরা সবার সহযোগিতা নেবো। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।”
মন্তব্য করুন