বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

দেশি সারের বিনিময়ে মিয়ানমারের মাদকের চালান

বৈশাখী ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম

সাগরপথে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে শত শত টন ইউরিয়া সার। সারের বদলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবা, আইসসহ অন্যান্য মরণঘাতী মাদকের চালান। উভয় দেশের একাধিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট প্রশাসনকে সমঝোতায় এনেই পাচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের টেকনাফ ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে সংযুক্ত করেছে নাফ নদী। এই সীমান্ত দিয়েই চলছে পাচারকার্য। সূত্রমতে, বাংলাদেশে যে সার প্রতি বস্তা ১ হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি হয় তা মিয়ানমারে বিক্রি হয় ৬ হাজার টাকায়, যাতে লাভ হয় প্রতি বস্তায় ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে প্রশাসন ম্যানেজসহ বিভিন্ন খাতে বস্তাপ্রতি ১ হাজার টাকা ব্যয় হলেও ৩ হাজারের বেশি মুনাফা থাকে। বিপুল পরিমাণ মুনাফার লোভেই চোরাকারবারিরা এই সার মিয়ানমারে পাচার করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের মুদ্রার চেয়ে মিয়ানমারের মুদ্রার মান অনেক কম হওয়ায় এবং টাকা লেনদেন বা হুন্ডির ঝুঁকি এড়ানের লক্ষ্যে পণ্যের বদলে পণ্য বিনিময় করা হচ্ছে বলে। এতে দুদিকেই লাভবান হচ্ছে পাচারকারীরা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথে ট্রাকে, কর্ণফুলীর নদীর মোহনা-আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপকূল দিয়ে নৌযান ও মাছধরা ট্রলারে এবং বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সাগরপথে চোরাকারবারিরা কৃষির অন্যতম উপকরণ মূল্যবান এই সার পাচার করে দিচ্ছে।

দেশে উৎপাদিত এবং সরকারিভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা ভর্তুকি মূল্যের এই সার পাচার হওয়ায় কৃষক ও কৃষি অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের আর্থিক গচ্চাও কম নয়। সড়কপথে খরচ ও ঝুঁকি খানিকটা বেশি থাকায় চোরাকারবারিরা নদীপথকেই রুট হিসাবে বেছে নেয়। চাক্তাই চামড়ার গুদাম ও ভেড়া মার্কেটের একাধিক চক্র সেখান থেকে কর্ণফুলী হয়ে নদীপথে সার পাচার করছে। এই চোরাকারবারির সঙ্গে উপকূলীয় এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দুই দেশের মাফিয়াচক্র জড়িত।

সীমান্তে বিজিবি এবং রাখাইনে আরাকান আর্মি ছাড়াও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করেই চোরাচোলান অব্যাহত রেখেছে। চোরচালানের জন্য তারা রাতের আঁধারকেই বেছে নেয়। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও পতেঙ্গার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদকদ্রব্য খালাস করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম জানান, এভাবে পাচার অব্যাহত থাকলে সামনের ইরি-বোরো মৌসুমে দেশে সারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। সারসহ বিভিন্ন পণ্য পাচাররোধ এবং মাদকদ্রব্য প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ‘কে শোনে কার কথা।

গত ৬ মাসে বেশ কিছু চোরাচালান পণ্য জব্দ করে শতাধিক বহনকারীকে গ্রেফতার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ। ১৪ মে কুমিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারে পাচারকালে ৩৪০ বস্তা (১৭ হাজার কেজি) ইউরিয়া সার জব্দ করে। কাফকো থেকে বের হওয়া এই সার মাছধরা ট্রলারে করে জালের নিচে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ট্রলারটিও জব্দ করা হয়। চলতি বছরের ২৬ জুন কোস্ট গার্ড সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ৪৩০ বস্তা ইউরিয়া সার, ৬০০ বস্তা আলু, ৪০ লিটার লুব অয়েল উদ্ধার করা করে। এর সঙ্গে জড়িত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এভাবে একাধিক অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া সার ও মাদক জব্দ করা হয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শাড়িকাণ্ডের ঘটনায় তানজিন তিশার নামে মামলা, তদন্তে ডিবি পুলিশ
শাড়িকাণ্ডের ঘটনায় তানজিন তিশার নামে মামলা, তদন্তে ডিবি পুলিশ
মোহাম্মদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২
মোহাম্মদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ২
মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তা, কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার
মোহাম্মদপুরে বাসে তরুণীকে হেনস্তা, কন্ডাক্টর গ্রেপ্তার
৫ দিনের রিমান্ডে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেফতার যুগল
৫ দিনের রিমান্ডে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে গ্রেফতার যুগল