
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের শক্তি-সামার্থ মানুষের হাতে নেই। তবে কিছু আত্মরক্ষার কৌশল জানলে ক্ষয়-ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতা। রোববার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালী হোটেল অবকাশে আয়োজিত উন্নয়ন ফলাফল অগ্রগতি: জাতীয় পর্যায়ে লার্নিং ডিসেমিনেশনবিষয়ক সভায় উপস্থিত আলোচকরা এ মন্তব্য করেন। দেশের প্রথম সারির এনজিও লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) ও যুগ্ম সচিব নাহিদা সুলতানা মল্লিক, কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেশালিষ্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম, দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার এবং লাইট হাউজের জেন্ডারবিষয়ক উপদেষ্টা ওয়াহিদা ইয়াসমীন প্রমুখ । অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রকল্প এলাকা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সেচ্চাসেবকরা। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ১৫ জন সংবাদকর্মী।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, লাইট হাউজ একটি বেসরকারি অলাভজনক, মানবাধিকার ও উন্নয়নমূলক সংস্থা। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র, প্রান্তিক ও উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠী, যৌন সংখ্যালঘু, হিজড়া, আদিবাসী এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। লাইট হাউজ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আরটিকেল ১৯ ও ফ্রী প্রেস আনলিমিটেডের আর্থিক সহায়তায় কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় (কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, রাজিবপুর) নতুন প্রকল্পে সফলতার সঙ্গে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির অন্যতম লক্ষ্য হলো সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে দূর্যোগকালীন নারী, কিশোরী ও অন্যদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সময় উপযোগী পদক্ষেপ সঠিক ও সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত পরিমান উদ্ধার সামগ্রী, প্রচুর সংখ্যক প্রশিক্ষিত জনবল হতে পারে ক্ষয়-ক্ষতি কমানোর ও জানমাল রক্ষার উপায়। এজন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। টেকসই দুর্যোগ মোকাবেলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমরা কতটা জোর দিচ্ছি প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের উপর। আইপিসিসি’র পঞ্চম আসেসমেন্টের প্রতিবেদন অনুসারে জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সফল না হলে নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাত-সহিষ্ণু সমৃদ্ধ বদ্বীপ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তিনি লাইট হাউসের মতো বেসরকারি সংস্থার সাথে পার্টনাশীপ করে উত্তরবঙ্গের সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) ও যুগ্ম সচিব নাহিদা সুলতানা মল্লিক বলেন, দেশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় প্রায়ই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তবে, এইসব পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশেই না, বরং সারা বিশ্বেই দুর্যোগ লেগেই আছে।
তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ দক্ষ, যেকারণে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে আছে। দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতাকে আরো টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে এবং এ সাফল্য ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় সুপরিকল্পনার মাধ্যমে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র, আরো বেশি সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা যেতে পারে।
কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেশালিষ্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম তার উপস্থাপনায় বলেন, দূর্যোগকালীন সময়ে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবং বসতবাড়িতে গৃহপালিত পশুপাখির বিপর্যয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ গর্ভবর্তী নারীরা অপুষ্টিতে ভোগে। মাসিক চলাকালীন সময়ে তাদের স্বাস্থ্যকর সেনিটেশনের ব্যবস্থাও থাকে না। যারফলে তারা অনেক সমস্যায় পড়েন।
তিনি আরো বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণগুলো মানুষের সৃষ্টি, তার সমাধানে সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপ দরকার। বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদী, খাল, বিল, হাওড়, ও অন্যান্য জলাভূমি দখলমুক্ত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। শহরের আশেপাশে জলাভূমি ভরাট করে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রোধ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ অনেক জেলা শহরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে অসম্ভব।
দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, কুড়িগ্রামের পাঁচটি উপজেলায় দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকিপ্রবণ নারী ও কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা মোকাবেলা লাইট হাউস সংস্থাটির কর্মকর্তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার। সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের মাধ্যমে নারী ও কিশোরীদের দূর্যোগের সময় আত্মরক্ষা ও জীবন বাঁচার উপর জানতে নিয়মিত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছেন। এধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন