
প্রাণঘাতী এইচআইভি প্রতিরোধে যুগান্তকারী এক নতুন ইনজেকশনের প্রয়োগ শুরু করেছে আফ্রিকার তিন দেশ এসওয়াতিনি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জাম্বিয়া।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বে এইচআইভির ঝুঁকিতে থাকা সর্বোচ্চ জনসংখ্যার এই মহাদেশে এটাই ওষুধটির প্রথম সরকারি ব্যবহার।
এইচআইভি প্রতিরোধী লেনাকাপাভির নামের এই ইনজেকশন বছরে দু’বার দিতে হয়। ইনজেকশনটি এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৯৯.৯ শতাংশের বেশি কমাতে সক্ষম; যা কার্যত একটি শক্তিশালী ভ্যাকসিনের মতো কাজ করে।
প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এইচআইভিবাহী রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ইউএনআইএইডের অর্থায়নে উইটস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা শাখার তত্ত্বাবধানে নাগরিকদের মাঝে ইনজেকশনটির প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
ইউএনআইএইডের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম কিছু ব্যক্তি এইচআইভি প্রতিরোধে লেনাকাপাভির ব্যবহার শুরু করেছেন... যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ছয় মাস অন্তর নেওয়া এই ইনজেকশনের প্রথম ব্যবহার।’’
যুক্তরাষ্ট্রে এই ইনজেকশনের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির পেছনে বছরে ২৮ হাজার ডলার খরচ হয়। আফ্রিকায় কতজন ব্যয়বহুল এই ইনজেকশনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন তা জানায়নি সংস্থাটি। আগামী বছর দেশটিতে আরও বড় পরিসরে প্রয়োগ শুরু হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী জাম্বিয়া ও এসওয়াতিনি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ হাজার ডোজ পেয়েছে। সোমবার বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে দেশ দু’টি এই ইনজেকশনের প্রয়োগ শুরু করেছে।
এসওয়াতিনির হুকউইনি এলাকায় গান ও নাচের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে ইনজেকশন প্রয়োগ শুরু হয়। এসওয়াতিনির প্রধানমন্ত্রী রাসেল ড্লামিনি বলেছেন, আজ আমাদের জাতীয় এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচির জন্য ইতিহাসের বাঁক বদলের মুহূর্ত তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ইনজেকশন দেশের জনগণের সুরক্ষায় নতুন আশার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচির আওতায় ইনজেকশনটির প্রস্তুতকারক কোম্পানি গিলিয়াড সায়েন্সেস এইচআইভির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ২০ লাখ মানুষকে আগামী তিন বছরে কোনও ধরনের মুনাফা ছাড়াই লেনাকাপাভির সরবরাহে রাজি হয়েছে।
তবে নীতিগত ইস্যুতে প্রিটোরিয়ার সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সত্ত্বেও দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্র কোনও ডোজ দেবে না। গত মাসের শেষের দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেরেমি লেউইন বলেছিলেন, আমরা প্রত্যেক দেশকে; বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো নিজেদের যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা দেশগুলোকে—নাগরিকদের জন্য ডোজ সংগ্রহে উৎসাহিত করি।
এই টিকাদান কর্মসূচির সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ ডোজ দিচ্ছে তা প্রকৃত চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আর বর্তমান বাজারদর অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে।
ইউএনএইডসের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ৪ কোটি ৮ লাখ এইচআইভিবাহীর মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশই পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করেন। কেবল জাম্বিয়াতেই প্রায় ১৪ লাখ মানুষ এইচআইভিবাহী এবং প্রতিবছর নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ৩০ হাজার বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এসওয়াতিনিতে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ এই ভাইরাস নিয়ে বেঁচে আছেন; যা ১২ লাখ জনসংখ্যার এই ক্ষুদ্র দেশের জন্য ভয়াবহ। ইউএনআইএইড ও গেটস ফাউন্ডেশনের ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ফলে ২০২৭ সাল থেকে ১০০টিরও বেশি দেশে বছরে প্রায় ৪০ ডলারে লেনাকাপাভির জেনেরিক সংস্করণ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন