নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ৪টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২০শে মে) রাতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স ফর ফুড, এনার্জি অ্যান্ড ফাইন্যান্স’ এর বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
অতিমারির ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই নাজুক বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের হঠাৎ ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপর্যস্ত সরবরাহ ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বর্তমান পরিস্থিতিকে অত্যন্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে, যেখানে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্যের স্বল্প সরবরাহ এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। স্বল্পোন্নত দেশ এবং এসআইডিগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের অবিলম্বে এবং লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রয়োজন।’
বিশ্বজুড়ে আর্থিক এ সংকট মোকাবেলায় নিজেকে গ্লোবাল সাউথের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি এ সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষের কণ্ঠস্বরকে এই টেবিলে পৌঁছে দিচ্ছি।”
এ বিষয়ে তিনি উন্নত দেশসমূহ ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য অর্থায়নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করতে হবে এবং একটি সু-সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ প্রণয়নের জন্য তাদের প্রচেষ্টায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন দেবো।’
দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবিলম্বে বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধাগুলো মোকাবেলা করা প্রয়োজন। এ প্রয়াস পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী এজন্য শুল্ক-মুক্ত-কোটা-মুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আরও সহজলভ্য করার জোর দাবি জানান।
তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকর খাদ্য সঞ্চয় ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য কৃষি খাতের জন্য প্রযুক্তি সহায়তা এবং বিনিয়োগের উপর আরও বেশি গুরুত্ব প্রদান করা অপরিহার্য। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে বিশেষ করে এলডিসিতে অনেক সম্ভাব্য ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে বেসরকারি খাতের সাথে সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হবে।’
চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪৮টি সদস্য রাষ্ট্রের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসাবে আমরা অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেসব দেশে কৃষি ও খাদ্যব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে।’
তাই সবার কল্যাণে জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্জিত জ্ঞান, বোঝাপড়া এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়াটা দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় দৃঢ় বিশ্বাসী। আমরা সর্বদা বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। এই গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি সেই প্রত্যয় থেকে উদ্ভূত। জাতি হিসাবে আমরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতার জন্য পরিচিত। কোভিড-১৯ মহামারী তার সর্বশেষ উদাহরণ।’
তিনি বলেন, ‘মহামারী কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টায় জীবন ও জীবিকার সুরক্ষার মধ্যে সতর্ক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। আমরা আমাদের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করেছি। যারা সবচেয়ে পিছনে রয়েছে তাদের সহায়তা দেয়ার আমরা সামাজিক সুরক্ষার কভারেজ প্রসারিত করেছি।’
rocky/shamim