নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে থানায় নিয়ে পেটানোর ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন সেদিনের ঘটনার সূত্রপাত যাকে নিয়ে সেই পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন। তিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী।
সানজিদা আফরিনের দাবি, তাকে চিকিৎসা নিতে সহায়তার জন্য সেই দিন বারডেম হাসপাতালে গিয়েছিলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ। তার স্বামীই প্রথম হারুন অর রশিদের গায়ে হাত তোলেন। আর নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ নেতাদের তিনি আগে থেকে চিনতেন না।
দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব দাবি করেন এডিসি সানজিদা। মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকদিন ধরে সিভিয়ার চেস্ট পেইনে ভুগছিলাম। এজন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘স্যারকে জানালে তিনি শাহবাগ থানার ওসির মাধ্যমে একজন ডাক্তারের সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন। পরে হাসপাতাল গিয়ে জানতে পারি সেই ডাক্তার একটি কনফারেন্সে আছেন, আসতে দেরি হবে। বিষয়টি স্যারকে জানালে তিনি সন্ধ্যায় হাসপাতালে আসেন। এরপর আরেকজন চিকিৎসক ম্যানেজ করে দেন তিনি। ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলে আমি ইসিজি রুমে যাই। একপর্যায়ে আমি বাইরে হট্টগোলের শব্দ শুনি। প্রথম যে সাউন্ডটা কানে আসে যে স্যারই (হারুন) চিৎকার করে বলছেন ‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসিজি রুম থেকে বের হয়ে দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড, ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।’
সানজিদা বলেন, ‘ওই সময় স্যার নিজের সেফটির জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন তৈরি হয়। এজন্য আমি শাউট করছিলাম। এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে দিয়ে ঘটনার ভিডিও করাতে শুরু করেন। যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না ইটিটি'র পোশাকে থাকা অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমার গায়ে হাত তোলেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়।’
এডিসি সানজিদার দাবি, ‘তার স্বামী কী কারণে এসেছিলেন তিনি জানেন না।’ আপনি অসুস্থ সেটা আপনার হাজবেন্ড জানতেন কি না এমন প্রশ্নে বলেন, আমি অসুস্থ সেটা আমার হাজবেন্ড জানতেন। কিন্তু আমি যে সেদিনই ডাক্তার দেখাতে যাবো সেটা তিনি জানতেন না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর হাজব্যান্ডের সঙ্গে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি আমার অফিসেই আছি।’
উল্লেখ্য, গেল শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২ নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে মারধর করেন এডিসি হারুন। ওই ঘটনার জেরে পরদিন রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে ডিএমপির সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয় এডিসি হারুন অর রশিদকে। এরপর একইদিন তাকে ২ বার বদলির আদেশ দেওয়া হয়। সবশেষ গতকাল সোমবার হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত করার পর তাকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল। মঙ্গলবার তাকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
rocky/habib