নতুন মাত্রায় বাংলাদেশ-ফ্রান্স সম্পর্ক

প্রকাশিত: ১১-০৯-২০২৩ ২২:২৬

আপডেট: ১১-০৯-২০২৩ ২২:২৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছালো। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি তারই ইঙ্গিত দেয়। দুই দিনের এই সফরে দুই সরকার প্রধান গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়নের দিকে জোর দিয়ে কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তাদের আলোকপাত করা বিষয়গুলো হলো:

১. জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তারা মনে করেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা সহজতর করতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা উচিত। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স নতুন তহবিল ব্যবস্থার বিষয়ে আলোকপাত করে। বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স পর্যবেক্ষণ করেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সার্বভৌমত্ব, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এজন্য এই দুই দেশ নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার বাস্তবায়নে খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থায় তাদের সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়। এই বিষয়ে ফ্রান্সের নেতৃত্বে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার রেজিলিয়েন্স মিশনে বাংলাদেশের যোগদানের প্রশংসা করে। পরে বাংলাদেশের নগর উন্নয়নে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি সাক্ষর করে ফ্রান্স। 

২. বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের প্রতি সম্মান রেখে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের নীতির প্রতি আলোকপাত করে। এজন্য সকল জাতির আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতে কাজ করার অঙ্গীকার করেন দুই সরকার প্রধান। তারা জাতিসংঘের সনদের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানায়। বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য একসাথে কাজ করার প্রতিশ্র“তি জানার। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোয়  বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান ম্যাক্রোঁ। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়,  বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ফ্রান্স। পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা প্রদানেও তাদের আগ্রহ রয়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে দুই দেশ নেতৃস্থানীয় ও দায়ত্বিশীল ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করা হয় যৌথ বিবৃতিতে। 

৩. ফ্রান্স থেকে ১০টি এ-৩৫০ মডেলের এয়ারবাস উড়জাহাজ কিনছে বাংলাদেশে। তাই ফরাসি আকাশযানের ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং তাদের থেকে উড়োজাহাজ ও স্যাটেলাইট কেনার ব্যাপারে প্রতিশ্র“তি দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় অ্যারোনটিকসে আস্থা রাখার জন্য এবং ১০টি এ-৩৫০ নেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্র“তি দেয়ার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। উড়োজাহাজের দিক দিয়ে এয়ারবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড।

৪. যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতœতত্ত্ব বিভাগটিও উঠে এসেছে তাদের আলোচনায়। উভয় দেশই তাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্কোন্নয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এজন্য বাংলাদেশে ফরাসি ভাষা এবং ফ্রান্সে বাংলা ভাষা শেখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন দুই সরকার প্রধান। এসময় বাংলাদেশের তরুণ কূটনীতিকদের জন্য ফ্রান্সে কূটনৈতিক ও ফরাসি ভাষার প্রশিক্ষণ দিতে সম্মত হয় ফ্রান্স। পাশাপাশি উভয় দেশ বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়। 

 

SAI/habib