আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উড়িষ্যায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনগুলোতে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। সেদেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দু’টি যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী ট্রেনের এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬১ জন। আহতের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। যদিও এর আগে, ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছিলো, নিহতের সংখ্যা ২৮০। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে চেন্নাইগামী করমন্ডল একপ্রেস ভুল লাইনে ঢুকে পড়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা। এদিকে, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় দুর্ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন তিনি। এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে মুহূর্তেই যেনো উল্টেপাল্টে গেলো সবকিছু। রেলের লাইন বলতে কিছুই নেই। দুমড়ে মুচড়ে গেছে বগিগুলো। একটার গায়ে উঠে পড়েছে আর একটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যাত্রীদের দেহ। কান্না আর আর্তনাদে থমথমে চারপাশ। ভারতের উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পরের চিত্র ছিলো এমন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যারাতে বালেশ্বর এলাকায় প্রথমে কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে আগে চলতে-থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। এর ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি ছিটকে পড়ে পাশের লাইনে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ছিটকে পড়া বগির সঙ্গে সংঘর্ষে হাওড়াগামী ট্রেনটিরও দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।
টানা ১৮ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালানোর পর উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলেও জানান তিনি। যদিও, ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য সংকেত দেয়ায় ব্যর্থতাকে দায়ী করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ভুল লাইনে ঢুকে পড়েছিল।
এদিকে, শনিবার বিকেলে বালেশ্বরে গিয়ে দুর্ঘটনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে সকাল থেকেই রয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। এ সময় রেলমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদী। কথা বলেন রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। এর আগে দিলিতে দুর্ঘটনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
এর আগে, এই দুর্ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নিহতদের পরিবারের জন্য ২ লাখ ও আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও, দেশটির রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ নিহতদের প্রতি পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। উড়িষ্যায় একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। এসময় সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়ে রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে যত ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে, শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি তার মধ্যে প্রাণহানির দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
AAJ/sat