নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ কি?

প্রকাশিত: ০৩-০২-২০২৩ ১৫:২৮

আপডেট: ০৩-০২-২০২৩ ১৫:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি দেশে উদ্বেগজনকহারে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৯শে জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক জানান, চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে ৮ জন শনাক্ত হলে এর মাঝেই ৫ জনই মারা যান। সবশেষ তথ্যমতে,  নাটোরে (দোসরা ফেব্রুয়ারি) ১২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। বিশ্লেষকদের মতে, বাদুরের খাওয়া খাবার এবং বিশেষ করে শীত মৌসুমে কাঁচা খেজুরের রস থেকে এই রোগ ছড়ায় বলে জানায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। 

তবে এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে যে বিষয়টি উদ্বেগের  তা হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায় এই ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাসের উপর্সগ, লক্ষণ, এই ভাইরাসকে এড়িয়ে চলার ব্যাপারে এই বিশেষজ্ঞের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈশাখী টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। 

তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে,  দেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয় মেহেরপুরে। সেটা ২০০১ সালের কথা। গত ২২ বছরে দেশের ৩২টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রায় ৪১টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। নথির বাইরেও ঘটনা থাকতে পারে। শুরু থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারিভাবে ৩২৫ জনের দেহে নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জনই মারা গেছে। গতবছর (২০২২) নিপাহ ভাইরাসে তিনজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু'জনকে বাঁচানো যায়নি। তাঁদের একজন ছিলেন নওগাঁর, অন্যজন ফরিদপুরের। হিসাবের এ ধরন থেকে বলা যায়, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা যান।

নিপাহ ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় জানতে চাইলে  অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন,‘ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ একধরণের ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ, যা নিপাহ ভাইরাসের মাধ্যমে ঘটে থাকে। ফলভোজী বাদুড়ের প্রস্রাব অথবা লালা দ্বারা দূষিত ফল বা ফলের পণ্য (যেমন, কাঁচা খেজুর রস) খাওয়ার ফলে ঘটে। তাই বাদুড়ে খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। এছাড়া তিনি বলেন,‘ কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া উচিত নয়। খেজুরের রস খেলেও অবশ্যই সেটি ফুটিয়ে খাওয়া হয়।’

এই ভাইরাসের লক্ষণগুলোর ব্যাপারে ডা. সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, এই সংক্রমণের কোন লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে বা জ্বর, কাশি, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট,  ইত্যাদি হতে পারে। এক বা দু'দিনের মধ্যে রোগী অচেতন হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক সময় মাথা ঘোরা, তৃষ্ণা, বেঁহুশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ এবং মস্তিষ্কের তীব্র সংক্রমণ জনিত স্নায়ুবিক লক্ষণ লক্ষ্য করা যেতে পারে। কিছু লোকের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, তীব্র বুক যন্ত্রণাসহ তীব্র শ্বাসকষ্টের সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়া ব্রেন, কিংবা হার্টে এই রোগের প্রভাব পড়তে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তীকে যত দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।

অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সাথে নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আলোচনায় উদ্বেগের বিষয় উঠে এসেছে তা হলো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়াতে পারে নিপাহ ভাইরাস। এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এটি ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তার লালার মধ্য দিয়েও এটি ছড়ায়। তাই কারো মাঝে নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে সুরক্ষা সম্বলিত দূরত্ব ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে'। তবে যাদের পূর্ববর্তী অন্যান্য রোগ আছে; যেমন কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা আছে তারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেড়ে যায় বলেও মত এই বিশেষজ্ঞের। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ ডা. জাহাঙ্গীরের।

Mustafiz/sharif